বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
No menu items!
Call for ad
Homeসিলেটসিলেটে ছাত্র-জনতার উপর হা ম লা র মামলায় উল্টো ছাত্ররাই আ সা...

সিলেটে ছাত্র-জনতার উপর হা ম লা র মামলায় উল্টো ছাত্ররাই আ সা মি

শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে সিলেটে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় উল্টো ছাত্রদেরকেই আসামি করার ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগে রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে মো. কামাল পারভেজ নামের একজন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ কয়েকজন শাবিছাত্রকেও আসামি করেছেন। এতে সিলেটের সচেতন মহল ও শাবিশিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এ মামলা থেকে নিরপরাধ ছাত্রদের বাদ দিতে শাবি’র সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহেদ আহমেদ। তিনি বলেন- আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে নির্দেশনা দিয়েছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই রাত নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মামলার বাদীর ভাতিজা মারুফ আহমেদসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর উপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এতে হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে আহত হন। হামলাকারীরা আহত কয়েকজনকে মৃত ভেবে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলায় মারুফ আহমেদের একটি চোখ চিরতরে অকেজো হয়ে গেছে।

মামলায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান, আরও কয়েকজন নেতাসহ ৩১ জন শিক্ষার্থী এবং ৮ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীসহ সর্বমোট ৭৯ জন আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতানামা আসামি করা হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ জন।

তবে নামোল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে কয়েকজন শাবির সাধারণ ও নিরপরাধ ছাত্র রয়েছেন। এমনকি হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা কয়েকজন ছাত্রকেও আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে শাবি শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ বলেন,‘যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল এমন কয়েকজনের নামও সংযুক্ত করা হয়েছে মামলায়। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা চাই প্রকৃত দোষীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। নিরাপরাদ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। শিক্ষার্থী কয়েকজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো যেন মামলা থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সমন্বয়কদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘এই মামলা কারা করেছে আমরা জানি না। আমরা ইতিমধ্যে পিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, এটা সমাধানের জন্য কথা বলবো।’

যারা শিক্ষার্থীদেরকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে মামলার অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসেবে দুই নম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেনের নাম উল্লেখ করা আছে। কিন্তু নাম সংযুক্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘আমাকে দ্বিতীয় সাক্ষী করে যে মামলা করা হয়েছে, এ সম্পর্কে আমি অবগত নই। তা নিয়ে যা করা প্রয়োজন, আইনি প্রক্রিয়ায় তা আমি করব।’

এ বিষয়ে মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের নাম মামলায় সংযুক্ত করার বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহেদ আহমেদ বলেন, ‘হ্যাঁ এ বিষয়ে আমাকে ২/৩ জন কল দিয়েছে। আমরা আবার আলোচনায় বসব। যদি নিরপরাধ কেউ থাকে তার নাম বাদ দিয়ে দিব। পাশাপাশি পিআইবি মামলাটি তদন্ত করবে। তখন নিরাপদ যারা আছে তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করব। নির্দোষ কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হবে না।’

অপরদিকে, নিরপরাধ ছাত্ররা মামলা থেকে মুক্তি পেতে শাবি প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সকল ছাত্র-ছাত্রী উপচার্য বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এতে তারা বলেন- ‘গত ১৯ জুলাই ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে শাবিপ্রবির ৩১ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ৭৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। উক্ত মামলায় শাবিপ্রবির একজন শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে স্বাক্ষী করা হয়েছে।  উক্ত মামলায় বেশ কয়েকজন নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সর্বদা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষাগ্রহণের পক্ষে এবং কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের নির্দোষ সহপাঠীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি তাদের জন্য মিথ্যা হয়রানি এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে, যা তাদের শিক্ষা ও জীবনের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

উক্ত প্রেক্ষাপটে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, যেন আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপে এই মামলাটি তদন্তের মাধ্যমে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের নাম প্রত্যাহার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের হয়রানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা হয়। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সদা প্রস্তুত এবং নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের প্রতি যথাযথ সুবিচার প্রদানে সচেষ্ট থাকবে।’

এইরকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপণ -
advertise

সর্বাধিক পঠিত