সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আক্তাপাড়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ময়নুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর এমন অভিযোগ দাখিল করেছেন অত্র প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য আক্তাপাড়া গ্রামের সমুজ আলীর পুত্র মো: জালাল মাহমুদ। এদিকে, অভিযোগকারী মো: জালাল মাহমুদকে কৌশলে মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২২-২০২৩ সনে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির পক্ষে অডিটর হিসেবে অডিট চলাকালীন সময়ে প্রতিয়মান হয় মাদ্রাসার তহবিলে অধ্যক্ষ ময়নুল হক কর্তৃক ব্যাপক লুটপাট ও অনিয়ম হয়েছে। মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার খরচ কমিটি বহন করবে এটা সরকারি নিদের্শ। কিন্তু এই নির্দেশ অমান্য করে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের প্রার্থীর নিয়োগের সময় গোপনে আনুমানিক দশ লক্ষ টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন। নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে কমিটির চাপাচাপিতে এক পর্যায়ে তিনি এক লক্ষ নব্বই হাজার টাকা প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত প্রায় ৬ থেকে ৭ শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি, বেতন, সেশন-ফি, জরিমানা-ফি-পরীক্ষার-ফি বিনা রশিদে আদায় করে আসছেন। দেশ বিদেশে অবস্থানরত সম্মানিত ডোনারদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ডুনেশন সংগ্রহ করেছেন রশিদ ছাড়া যার সঠিক কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।
ইতিমধ্যে মাদ্রাসায় সরকার অনেক বরাদ্দ দিয়েছেন যার কোনো সঠিক হিসেব নেই। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় ঢাকা-সিলেট সুনামগঞ্জ যাওয়া বাবত ভাউচার ছাড়াই মোটা অংকের খরচ দেখিয়েছেন। কিন্তু মাদ্রাসার কাজে গেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। এবং কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে উনার নিজ স্ত্রীকে নিয়োগ দেখিয়ে সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করছেন। কিন্তু মাদ্রসায় কম্পিউটার বিষয়ে কোনো ক্লাস হয় না। তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস দখল করে বছরের পর বছর ছাত্রাবাসে বসবাস করে আসছেন।
এ বিষয়ে বিগত দিনে কয়েকবার মাদ্রাসায় বৈঠক হওয়ার পর তিনি ছাত্রাবাস ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কথা থাকলে ও এখন ও তিনি ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন বহাল তবিয়তে। বিগত দিনে ৩ ছাত্রীকে বেধড়ক মারধর করে মাদ্রাসার বাথরুমে আটকে রাখার বিষয়ে ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তিনি তার পক্ষে নেওয়ার জন্য নানান সময় টাকা অফার করলে অভিযোগকারীকে সামাজিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার পরিকল্পনা করেন ওই অধ্যক্ষ। এমতাবস্থায় অধ্যক্ষের এসব অনিয়ম দূনীর্তির বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন সহ অধ্যক্ষকে অপসারণ চেয়ে এমন অভিযোগ দাখিল করেন সাবেক এই গভর্নিং বডির সদস্য।
এদিকে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় কৌশলে এ ব্যাপারে আলোচনার কথা বলে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে মাদ্রাসায় ডেকে মারধর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী মো: জালাল মাহমুদ। এবং অভিযোগকারীর বাড়িঘরে হামলার পরিকল্পনা করছেন অধ্যক্ষপন্থী আক্তাপাড়া ও রসুলপুর গ্রামের কিছু সংখ্যক ব্যক্তিরা।
অভিযোগের ব্যাপারে আক্তাপাড়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ময়নুল হক জানান, দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে আমি জড়িত না। গ্রামের পঞ্চায়েত আছেন তারা তা দেখবেন। মারধরের বিষয়টি আমি জানিনা।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা জানান, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।