রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরভ আজ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মস্কোর কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে নতুন নতুন বন্ধুর সন্ধান রাশিয়ার জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, আবার বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার বিশ্বের অপরাপর দেশকে পাশে চায়; তাই ল্যাভরভের এই সফরকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন ঢাকার কূটনীতি সংশ্লিষ্টরা।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া ইউরোপে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছিল, তা ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে তলানিতে ঠেকেছে।ইউক্রেন যুদ্ধ রুশদের একা করে দিয়েছে। মস্কোর সঙ্গে ঢাকার যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, তা যেন অটুট থাকে এবং সামনের দিনেও বাংলাদেশ যেন দেশটির পাশে থাকে সেই বার্তা সম্ভাব্য বৈঠকগুলোতে ল্যাভরভ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কূটনীতিক সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে রাশিয়া এখন অনেকটাই বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য প্রভাবশালী পরাশক্তির কারণে যেন ঢাকার অবস্থান পরিবর্তন না হয়, সেটাই হয়তো মস্কোর চাওয়া থাকবে। অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ কিন্তু পরোক্ষভাবে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। সেটা কিন্তু ঠিকই রাশিয়ার পক্ষে যাচ্ছে।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ল্যাভরভ তুলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মালামাল নিয়ে আসা রুশ জাহাজকে যে পরিমাণ ঝামেলায় পড়তে হয়েছে, তা গুরত্ব দিয়ে আলোচনায় তুলবেন ল্যাভরভ কূটনৈতিক সূক্রে আরও জানা যায়, ঢাকা-ওয়াশিংটনের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তার একটি গুরত্বপূর্ণ কারণ মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা। আর মস্কোর দিক থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ায় বিপদ হয়েছে ঢাকার জন্য। কেননা, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিক পত্র পেয়ে রুশ জাহাজকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক জাহাজকে কেন্দ্র করে ঢাকা-মস্কো সম্পর্কে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন ল্যাভরভ। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে মোমেন-ল্যাভরভ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন।দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসবে। ঢাকা-মস্কো সম্পর্ক জোরদার, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিস্থিতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনার টেবিলে থাকবে।পাশাপাশি ইউক্রেন পরিস্থিতি, ভূ-রাজনীতি, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া জ্বালানি সহযোগিতা এবং রাশিয়া থেকে গম ও সার আমদানির বিষয়ে ঢাকা গুরুত্ব দেবে বলে মনে করছে সূত্রগুলো।দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে নৈশভোজে অংশ নেবেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খাওয়ার টেবেলি মোমেন-ল্যাভরভ জাতিসংঘ, আঞ্চলিক ও অন্যান্য বৈশ্বিক ফোরামে সমর্থন ও সহেযাগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ইঙ্গিত রয়েছে।রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ঢাকা-মস্কোর মধ্যে কোনো চুক্তি হবে না। তবে দ্বিপক্ষীয় লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দুই দেশের মধ্যে ঝুলে থাকা চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গন সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক মেরুকরণ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক হিসাব কষেই চলতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। সম্পর্ক রক্ষায় করতে হচ্ছে ভারসাম্য। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সতর্ক থাকতে হচ্ছে ঢাকাকে।