আগামী বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসে এবং এইচএসসি এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত দুই-তিন বছর আমাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার একটু এলোমেলো হয়েছে। আগামী বছর থেকে এটা ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। আগামী বছর আমরা চেষ্টা করবো এইচএসসি পরীক্ষায় এপ্রিলে এবং এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে নেওয়ার। সে অনুযায়ী ক্লাসে পাঠদান করানো হবে।তিন বোর্ডে দশ দিন দেরিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হলেও একসঙ্গে ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তিন বোর্ডে দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব ৬০ দিনের মধ্যে একসঙ্গে রেজাল্ট প্রকাশ করতে। মন্ত্রী বলেন, দেশে ডেঙ্গু মহামারি বাড়লেও ডেঙ্গু আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সব পরীক্ষা কেন্দ্রেই ডেঙ্গু আক্রান্ত পরীক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসাসহ বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের কোনো পাবলিক পরীক্ষায় গত পাঁচ বছরে কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। যা ছড়িয়েছে সেগুলো সবই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এগুলোর সবই গুজব।তিনি বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে আমরা প্রশ্নফাঁস রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থেকেছি। এজন্য কোনো প্রশ্নফাঁসের ঘটনাও ঘটেনি। আশা করি এবারের এইচএসসি পরীক্ষাতেও এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। যদি কেউ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থেকে ব্যবস্থা নেবে।
আজ রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল, পরীক্ষার সময়টা একটু আগানো যায় কি না, এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসির সময় আমরা এটা করেছিলাম। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা দুই বেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই বেলা পরীক্ষা থাকলে দেরিতে শুরু করলে সমস্যা হয়ে যায়। আমরা দেখেছি অনেক বেশি ভিড় হয়, জ্যাম হয়। পরীক্ষার্থীদের অনেক আগে বাসা থেকে বের হতে হয়। দেরি হয়ে গেল কি না, তাদের মধ্যে অ্যানজাইটি কাজ করে। সে জন্য সময়টা অ্যাডজাস্ট করলে ভালো হয়। কিন্তু দুই বেলা পরীক্ষা থাকলে সেটা আর করা যায় না।বিভিন্ন কেন্দ্রের পরিবেশ খুবই অগোছালো, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দীপু মনি বলেন, আমরা খেয়াল করেছি প্রতি কেন্দ্রের বাইরে অনেক ভিড়। পরীক্ষার্থীদের বাবা-মা-অভিভাবক ভিড় করেন। অবশ্য আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখনও আমাদের বাবা-মায়েরা আসতেন। আমরা কাউকে দোষ দিতে পারি না। বাবা-মা যারা আসেন, তারা যদি একদম গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে অন্য পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। আমি আহ্বান করবো, আপনার সন্তানের মতো অনেকের সন্তান পরীক্ষা দিচ্ছে। তাই একটু দূরে থাকুন।প্রশ্ন ফাঁসের গুজব বা ফাঁস আছে কি না, প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার নতুন কিছু সমস্যা হবে না বলে আশা করি। পুরনো যে সমস্যা, তা যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। পাঁচ বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁস নেই। গুজবও কমে এসছে। আশা করি এবারও থাকবে না।
প্রতিবছর এইচএসসির ফরম পূরণে ৩৫০ কোটি টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করা যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন দারিদ্র্য যেন কোনও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। অর্থাৎ রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে। সেই প্রতিজ্ঞা বঙ্গবন্ধু করে গেছেন। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন। কাজেই কোনও শিক্ষার্থী যদি এই রকম অবস্থায় থাকে, তার জন্য সব ব্যবস্থা আমরা করতে পারি। যদিও আজকাল ওই রকম অবস্থা খুব কম। যেসব শিক্ষার্থীর সক্ষমতা নেই, তাদের ভর্তির ব্যবস্থা করবে, টিউশন ফি ফ্রি করে দেওয়া, সেটাও তারা করবে বলে আশা করি। আর সরকারের তো উপবৃত্তি আছেই।আজ শুরু হয়েছে দেশের ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা। প্রথম দিনে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা চলছে। এ পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১টায়। ৮টি বোর্ডের ১ হাজার ৩৮৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী।এ বছর একটি বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণসময়ে পরীক্ষা হবে। শুধুমাত্র আইসিটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী- এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।অন্যদিকে প্রশ্নফাঁস ও নকলমুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নানান উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো। এরমধ্যে অন্যতম, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা। গত ১৪ আগস্ট থেকে সারাদেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোচিং বন্ধ রাখা হবে।বৃহস্পতিবার থেকে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে একযোগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এ পরীক্ষা অংশ নিতে মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন। তবে বন্যার কারণে চট্টগ্রাম, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়। চারটি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ায় আগামী ২৭ আগস্ট এ তিন বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হবে।