এবার আগুন দেওয়া হয়েছে আশির দশকের স্বৈরতান্ত্রিক দল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার মিছিলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হামলার জেরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কাকরাইলের বিজয়নগরে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডাকার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা থেকে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার’ ব্যানারে মশাল মিছিল বের হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশালমিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে দলটির কার্যালয় ঘেরাও করতে কাকরাইলের বিজয়নগর এলাকায় মিছিল নিয়ে যান কিছু নেতাকর্মী। এ সময় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে থাকা নেতাকর্মীর পক্ষ থেকে মিছিলে হামলা চালানো হয়। জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিছিলে থাকা মাইকও ভাঙচুর করেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। কিছুক্ষণ পর ছাত্র-জনতা সংগঠিত হয়ে এসে ওই কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান এবং সামনে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনাস্থলে থাকা গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য শাকিল উজ জামান বলেন, আমাদের মিছিল এখানে আসার পর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে থাকা লোকজন হামলা করে। জাতীয় পার্টির নামে এখানে আওয়ামী লীগ যুবলীগের লোক ছিল। পাল্টা হামলা করার ভয়ে তারা কার্যালয়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, ২রা নভেম্বর জাতীয় পার্টি কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক চলছিল। এ সময় বাইরে কিছু লোক এসে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পরে উপস্থিত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর বিজয়নগর থেকে কিছু লোক এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের নিচ তলায় আগুন দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসলেও প্রথমে বাধা দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর তারা আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ছাড়াও নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শনিবার সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। এই কর্মসূচি ঘোষণার পরই ছাত্র-জনতার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই সমাবেশ ডাকার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিলের ঘোষণা দেয়া হয়।
হামলা-সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ছাত্রদের আরও মিছিল কাকরাইল এলাকায় আসে।
ছাত্র শ্রমিক জনতার মশাল মিছিল শুরুর আগে বক্তারা বলেন, আপনারা জানেন আওয়ামী লীগ সরকার জুলাই মাসে সারা দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ দোসরদের পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে। বাংলার মুক্তিকামী জনতা তা কখনোই মেনে নেবে না।