দলের হাইকমান্ডের কড়া নির্দেশনা উপেক্ষা করে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতারা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাদের একের পর এক বহিষ্কার করা হচ্ছে। কেউ হচ্ছেন সাময়িক, আবার কেউ হচ্ছেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার।
এমন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় জনসাধারণের কাছে দলটির ভাবমূর্তি আরও ক্লিন হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর দলীয় নেতারা বলছেন- দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যে কোনো স্তরের নেতা অপকর্মে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সিলেট জেলা ইউনিটের আওতাধীন জকিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও পৌর বিএনপি নেতা সুলতান আহমদকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এতে বলা হয়- জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ জারি থাকবে।
এদিকে, রবিবার (১৪ অক্টোবর) রাতে জকিগঞ্জ পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রাজনসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর উপর হামলা করে গুরুতর আহত করার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় সংগঠনের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের কারণে জকিগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আব্দুস সালামের পদ স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে কেন তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে না- এই মর্মে আগামী ৩ দিনের মধ্যে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধসহ নির্দেশ প্রদান করা হয়। সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ও সদস্যসচিব শাকিল মোর্শেদ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এর আগেও ২৭ আগস্ট আরেকটি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য সালামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিলো । ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার শর্তে ও লিখিত ক্ষমা প্রার্থনার প্রেক্ষিতে তার সাময়িক বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিলো। তবে মাত্র কয়েক দিনের মাথায় আত্বশুদ্ধির পরিবর্তে বেপরোয়া আচরণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় দল সালামের বিরুদ্ধে আবার সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরবর্তী নির্দশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল সিলেটভিউ-কে জানান।
তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে বলেন- এ বিষয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দেবে, অপরদিকে সালাম তার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি দোষী সাব্যস্থ না হলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে, আর দোষী হলে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে, সিলেটে রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে চোরাই চিনিকাণ্ডে জড়িত সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা সোনালী-২২ বাসার মৃত দিলু মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান (৪৩) এবং সিসিকের ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ভার্থখলা রুপালি আবাসিক এলাকার ৪৫ নং বাসার মৃত ছানা মিয়ার ছেলে মো. সুলেমান হোসেন সুমনকে (৪২) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে দল। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে স্থায়ী বহিস্কারাদেশ প্রদান করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়- দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করে চিনি চোরাচালানিতে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আবদুল মান্নান ও মো. সোলেমান হোসেনকে সাময়ীক বহিষ্কার করা হয়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সিলেটভিউ-কে বলেন- দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের ক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি। কারো দ্বারা দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হলে আমরা বরদাশ করবো না, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন- দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।