সিলেটে হঠাৎ বেড়েছে বজ্রপাতে মৃত্যু। শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বরের ২১ ও ২৯ তারিখ সিলেট ও সুনামগঞ্জে অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বজ্রপাত নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলেই ভয় আর আতঙ্ক শুরু হয় মানুষের মধ্যে। অনেকেই জীবিকার তাগিদে কিংবা অতি জরুরী প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যান! একেকটা মৃত্যুতে নিঃস্ব হয়ে পড়ে তাদের পরিবার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার ‘বৈপরীত্যের’ কারণে গত দুই বছরে পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটেছে।
সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দিবাগত রাত ২টার পর থেকে রাত ৫টা পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্নস্থানে বজ্রবৃষ্টি হয়। গভীর রাতে ঢানা তিন ঘণ্টা বজ্রপাতের বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষজন। অনেকেই ভয় আর আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিলেট ও সুনামগঞ্জে ১২ জনের মৃত্যুর হয়। এদিন সিলেট জেলার কানাইঘাটে দুইজন, জৈন্তাপুরে দুইজন ও কোম্পানীগঞ্জ একজন ও গোয়াইনঘাটে একজন মৃত্যুবরণ করেন। আর ২৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে দুইজন, জামালগঞ্জ ও ছাতকে একজন করে মারা গেছেন। এছাড়া ২৯ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়।
এরমধ্যে পৃথক বজ্রপাতে ২৯ সেপ্টেম্বর (রোববার) সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাজনগর গ্রামের কনু মিয়ার ছেলে মাসুক আহমেদ (৪১), বিশ্বনাথের দশঘর ইউনিয়নের সাড়ইল গ্রামের অলিউর রহমানের ছেলে ও মুরারিচাঁদ কলেজের (এমসি) শিক্ষার্থী রেদওয়ান আহমদ (২২), সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের পলিরচর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া (৩০), একই গ্রামের নুরুল হকের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৮), ছাতক উপজেলার সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের খুর্শিদ আলীর ছেলে সুন্দর আলী, জামালগঞ্জ উপজেলার কালাগোজা গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে শরিফ মিয়া (৩৫) মারা যান।
সিলেট জেলাতে পৃথক বজ্রপাতে ২১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) মারা যান কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের কেউটিহাওর গ্রামের জমশেদ আলীর ছেলে কালা মিয়া (৩৫), কানাইঘাট পৌরসভার উত্তর দলইরমাটি গ্রামের তুতা মিয়ার ছেলে নূর উদ্দিন (৫৮), জৈন্তাপুর উপজেলার আগফৌদ গ্রামের নূরুল হকের ছেলে নাহিদ আহমদ (১৩), একই ইউনিয়নের ভিত্রিখেল ববরবন্দ গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান মনই (৪৫), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পুটামারা গ্রামের আরফান আলীর ছেলে নেজামুল হক (২১) ও গোয়াইনঘাটে জাফলং ইউনিয়নের ভিত্রিখেল হাওর গ্রামের আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী রোকশানা বেগম (৪৭) মারা যান।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সাধারণত বর্ষার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ে। ফলে উন্মুক্ত স্থান বা হাওরের নানা কাজে সাধারণ মানুষকে যেতে হয়। এতে মুত্যুর সংখ্যাও বাড়ে।
তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের মধ্যে ১০৫টি সিলেট ও সুনামগঞ্জে ১৩৫টি হাওর রয়েছে। হাওর বেশি হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা সুনামগঞ্জ। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ৮ বছরে বজ্রপাতে এ জেলায় অন্তত ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের পর থেকে বজ্রপাতকে একটি দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। সাধারণত পাহাড়বেষ্টিত এলাকা ও খোলা জায়গায় বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। এই হিসেবে সিলেট বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।