গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সিলেটসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড (নারী) কাউন্সিলরকে অপসারণ করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর ৩ দিনের মাথায় রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) পরিচালনায় ২৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার। সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কমিটির বাকিরা হলেন- সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) যুগ্ম-কমিশনার, সংশ্লিষ্ট পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক মনোনীত) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি (চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত), সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি (চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত), জেলা প্রশাসন-স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/উপ-পরিচালক (জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত), বাংলাদেশ টেলি-কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর মহাব্যবস্থাপক, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক/নির্বাহী প্রকৌশলী, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স-এর প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর প্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকর পতনের পর ১৯ আগস্ট সিলেটসহ দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়। তাদের অপসারণের পর সব সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে সিসিক মেয়রের পরিবর্তে প্রশাসক হিসেবে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার দায়িত্ব পালন করছেন।
এর প্রায় দেড় মাসের মাথায় অপসরাণ করা হয় সব সিটি কাউন্সিলরকে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরই সিলেটের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামানও লাপাত্তা হয়ে যান। সম্প্রতি খবর পাওয়া যায়- দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছেন তিনি। তবে তিনি কবে ও কীভাবে লন্ডনে গেছেন তা জানা যায়নি।
একটি সূত্র বলছে- সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে চলে যান। সেখান থেকে যান লন্ডনে।
এদিকে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিলেটে প্রথম মামলা হয়েছে ১৯ আগস্ট। এটি হত্যা মামলা। সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আখালিয়া এলাকায় পানিতে পড়ে মারা যান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র রুদ্র সেন। এ ঘটনায় ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেনের আদালতে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবির সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম। এই মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এরপর আরও ৮টি হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে অন্তত ২০টি।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একজন ব্রিটিশ নাগরিক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের পঞ্চম নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।
এ নির্বাচনে সিসিকের ৪২ ওয়ার্ডে নির্বাচিত হওয়া সাধারণ কাউন্সিলররা ছিলেন- ১নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ২নম্বর ওয়ার্ডে বিক্রম কর সম্রাট, ৩নম্বর ওয়ার্ডে আবুল কালাম আজাদ লায়েক, ৪নম্বর ওয়ার্ডে শেখ তোফায়েল আহমদ শেপুল, ৫নম্বর ওয়ার্ডে রেজওয়ান আহমদ, ৬নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ হোসেন শামীম, ৭নম্বর ওয়ার্ডে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ, ৮নম্বর ওয়ার্ডে জগদীশ চন্দ্র দাশ, ৯নম্বর ওয়ার্ডে মখলিছুর রহমান কামরান, ১০নম্বর ওয়ার্ডে তারেক উদ্দিন, ১১নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুর রকিব বাবলু, ১২নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সিকন্দর আলী, ১৩নম্বর ওয়ার্ডে শান্তনু দত্ত সন্তু, ১৪নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুমিন, ১৫নম্বর ওয়ার্ডে ছয়ফুল আমিন বাকের, ১৬নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল মুহিত জাবেদ, ১৭নম্বর ওয়ার্ডে রাশেদ আহমদ, ১৮নম্বর ওয়ার্ডে এবি এম জিল্লুর রহমান, ১৯নম্বর ওয়ার্ডে এস এম শওকত আমীন তৌহিদ, ২০নম্বর ওয়ার্ডে আজাদুর রহমান, ২১নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আব্দুল রকিব তুহিন, ২২নং ওয়ার্ডে ফজলে রাব্বী চৌধুরী, ২৩নম্বর ওয়ার্ডে মোস্তাক আহমদ, ২৪নম্বর ওয়ার্ডে হুমায়ুন কবির সুহিন, ২৫নম্বর ওয়ার্ডে তাকবির ইসলাম পিন্টু, ২৬নম্বর ওয়ার্ডে তৌফিক বক্স লিপন, ২৭নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল জলিল নজরুল, ২৮নম্বর ওয়ার্ডে রায়হান হোসেন, ২৯নম্বর ওয়ার্ডে মাজহারুল ইসলাম শাকিল, ৩০নম্বর ওয়ার্ডে রকিব খান, ৩১নম্বর ওয়ার্ডে নজমুল হোসেন, ৩২নম্বর ওয়ার্ডে রুহেল আহমদ, ৩৩নম্বর ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসেন, ৩৪নম্বর ওয়ার্ডে জয়নাল আবেদীন, ৩৫নম্বর ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম, ৩৬নম্বর ওয়ার্ডে হিরন মাহমুদ নিপু, ৩৭নম্বর ওয়ার্ডে রিয়াজ মিয়া, ৩৮নম্বর ওয়ার্ডে মো. হেলাল উদ্দিন, ৩৯নম্বর ওয়ার্ডে আলতাফ হোসেন সুমন, ৪০নম্বর ওয়ার্ডে লিটন আহমদ, ৪১নম্বর ওয়ার্ডে ফখরুল আলম এবং ৪২নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান।
আর সংরক্ষিত ১৪ ওয়ার্ডে বিজয়ী নারী কাউন্সিলররা ছিলেন- ১নং ওয়ার্ডে সালমা সুলতানা, ২নং ওয়ার্ডে কুলসুমা বেগম পপি, ৩নং ওয়ার্ডে রেবেকা বেগম রেনু, ৪নং ওয়ার্ডে মোছা. রুহেনা খানম মুক্তা, ৫নং ওয়ার্ডে শাহানা বেগম শানু, ৬নং ওয়ার্ডে শাহানারা বেগম, ৭নং ওয়ার্ডে নার্গিস সুলতানা, ৮নং ওয়ার্ডে শারমিন আকতার রুমি, ৯নং ওয়ার্ডে ছমিরন নেছা, ১০নং ওয়ার্ডে আয়শা খাতুন কলি, ১১নং ওয়ার্ডে সালমা আক্তার, ১২নং ওয়ার্ডে মোছা. হজেরা বেগম, ১৩নং ওয়ার্ডে ফাতেমা বেগম, ১৪নং ওয়ার্ডে বাবলি আকতার।