ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত জুলাই-আগস্ট মাসে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ পর্যায়ে ৬৯টি কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সিলেট। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (এনআইডি) বিভিন্ন সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- কিছু অফিসের কোনো কাগজপত্রই নেই, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজসহ যন্ত্রপাতিও পুড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো থেকে সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে বিকল্প উপায়ে কিছু কিছু কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
আন্দোলনের পর ক্ষতি নিরুপণে গঠিত কমিটির সভাপতি ও ইসির বাজেট শাখার উপসচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের দেওয়া এক প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
অধিক ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছেন সিলেটের আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কার্যালয়। বাকিগুলো হচ্ছে- রংপুরের মিঠাপুকুর, বগুড়ার দুপচাচিয়া, সিরাজগঞ্জ জেলা, সিরাজগঞ্জ উপজেলা, শেরপুর জেলা ও উপজেলা, কুমিল্লার চান্দিনা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি।
সিলেটসহ এসব অফিসে ৪ ও ৫ আগস্ট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফটোকপিয়ার, ইউপিএস, আইপিএস, টেন ফিঙ্গার স্ক্যানার, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, আইরিশ স্ক্যানার, বারকোড স্ক্যানার, লেমিনিটিং মেশিন, প্রোজেক্টর, এসি, ক্যামেরা, সিগনেচার প্যাড, সিসি ক্যামেরা, টেবিল, চেয়ার, সোফা, টেলিফোন, পানির ট্যাংক, স্মার্ট কার্ড রিডার, ট্যাব, ডকুমেন্ট স্ক্যানার, মূল সার্ভার, প্রিন্টার, রাউটার, অফিসিয়াল সিম ও মডেম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, রক্ষিত ফরম-২, ফরম-১২ ও ফরম-১৩, ভোটার তালিকা, আলমিরা, অফিসের সকল ফাইল, সকল প্রকার রেজিস্টার, ক্যাশ বহি, ব্যাংকের চেক বহি ও বিল ভাউচার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, সার্ভার র্যাক, লাইট,
পানির ফিল্টার, ফ্যান, অবিতরণকৃত স্মার্টকার্ড, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচনী বস্তা, মূল্যবান বই পুস্তকসহ অনান্য সকল সরঞ্জামাদি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও পুরো ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে সেবা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ইসি সচিব শফিউল আজিম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ৬৯ টি অফিসকে ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ক্যাটাগরি-১ (অধিক ক্ষতিগ্রস্ত), ক্যাটাগরি-২ (মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্ত) ও ক্যাটাগরি-৩ (কম ক্ষতিগ্রস্ত)।
আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত অফিসগুলোর এনআইডি সংক্রান্ত সেবা জরুরি ভিত্তিতে চালুর জন্য আইডিইএ-২(স্মার্টকার্ড প্রকল্প) থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা ক্ষয়-ক্ষতির ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর (গণপূর্ত বিভাগ, এলজিইডি, বিআরটিএ ইত্যাদি) হতে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক, জেলা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক প্রাক্কলন সংগ্রহ করার কথা বলা হয়েছে।
৬৯টি কার্যালয়ের মধ্যে ক্যাটাগরি-
১ (অধিক ক্ষতিগ্রস্ত) তালিকাভুক্ত মোট ১০ টি অফিস এবং ক্যাটাগরি-২ (মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্ত) তালিকাভুক্ত মোট ১৭ টি অফিসের সংশ্লিষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন/প্রাক্কলন/চাহিদা প্রাপ্তির পর যৌক্তিকতা বিবেচনায় বাজেট অধিশাখা হতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া ক্যাটাগরি-৩ (কম ক্ষতিগ্রস্ত) এ তালিকাভুক্ত মোট ৪২ টি অফিসের নিয়মিত বরাদ্দ হতে মেরামত/সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।