লন্ডন : স্টুডেন্ট ভিসায় পড়তে এসে সমকামী পরিচয়ে ব্রিটেনে এসাইলাম আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু আদালত বললেন, আবেদনকারী সত্যিকারের সমকামী না। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে সমকামী পরিচয়ে এসাইলাম আবেদনকারী প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনকে ব্রিটিশ হোম অফিস অফিসারের উল্টো পাল্টা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
নিরাপদ এবং স্বচ্ছল জীবনের আশায় ব্রিটেনে প্রবেশ এবং এসাইলাম পাওয়ার জন্যে মানুষ অনেক কিছুই করে। জীবন বাজি রেখে কতোজন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন সেই হিসেব কিছু দিন দিন পরপরই হোম অফিস প্রকাশ করে। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে মারাও যান ভাগ্যাহত কেউ কেউ। তারা হন সংবাদ শিরোনাম। তবে নৌকাযোগে হোক কিংবা অন্যকোনো অবৈধ বা বৈধপথেই হোক ব্রিটেনে প্রবেশের পর এসাইলাম পেতে বা স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেতে শুরু হয় আরেক সংগ্রাম।
সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক মেট্টোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ব্রিটেনে এসাইলাম পাওয়ার জন্যে সিলেটের এক পুরুষের প্রচেষ্টা বা সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছে। মেট্টোর এক্সক্লুসিভ ঐ প্রতিবেদনে সিলেটের ঐ পুরুষের নাম এবং ছবিও প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, মনসুর আহমেদ চৌধুরী নামে ৩৮ বছর বয়সী এক পুরুষ ২০০৯ সালে সিলেট থেকে ব্রিটেনে পড়তে আসেন। ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তার ভিসার মেয়াদ ছিল। এরমধ্যে টিয়ার ফোর স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর ২০১৭ সালে প্রথম এসাইলাম আবেদন করেন মনসুর আহমেদ চৌধুরী। এতে নিজেকে উপস্থাপন করেন সমকামী হিসেবে। ইসলাম ধর্মে হারাম এবং বাংলাদেশেও আইনত অবৈধ উপায় অবলম্বন করে নিজের এসাইলাম আবেদন করেন তিনি। নিজেকে সমকামী হিসেবে প্রমাণ করতে লন্ডনে সমকামীদের র্যালি, পাবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ছবিও তুলেন তিনি। হোম অফিসকে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে অবস্থানকালেই তিনি সমকামী ছিলেন। কিন্তু দেশে ধর্ম, সমাজ এবং আইনের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে কখনোই নিজের ইচ্ছের কথা কাউকে ভয়ে বলেননি। কিন্তু মনসুর সমকামী বলে আদালত বিশ্বাস করেনি। ফলে ২০১৮ সালের মার্চে তার এসাইলাম আবেদন খারিজ হয়ে যায়। চলতি বছরের জুনে মনসুর আহমেদ চৌধুরী পুনরায় আপিল করেন। তবে তাতে লাভ হয়নি। ৩৮ বছর বয়সী মনসুর আহমেদ চৌধুরীর ভবিষ্যত এখন অন্ধকার। মনসুর আহমদে চৌধুরী লন্ডনের নর্থওয়েস্ট কলেজ থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেছেন। এরপর লন্ডন ওয়েস্টভ্যালি কলেজে আইটিতে ভর্তি হন। হোম অফিস জানিয়েছে, ২০২২ সালে ১ হাজার ৩শ ৩৪টি এসাইলাম আবেদন ছিল লিঙ্গ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে। অপর এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন এলজিবিটিকিউ এসাইলাম আবেদনকারী হোম অফিস অফিসারদের উল্টো-পাল্টা প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছেন।