বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে মনু নদীর বাধ ভেঙে ও বন্যা প্রতিরক্ষা বাধ উপচে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে রাজনগরের কামারচাক, মনসুরনগর, টেংরা, রাজনগর ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের লক্ষাধীক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে হৃদয় (১৯) নামে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম রাজনগর বাজারে বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বণ্যা দূর্গতদের জন্য গ্রাম পর্যায়ে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তাও পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন বন্যাআক্রন্তরা।
রাজনগর উপজেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্গত এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রবল বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে মনু, ধলাই ও লাঘাটা নদীর উপচে পড়া পানিতে উপজেলার শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত ২১ আগষ্ট মনু নদীর ডাইক ও প্রতিরক্ষা বাধের ৮টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে রাজনগরের এসব এলাকা প্লাবিত হয়।
এদিকে গত ২২ আগষ্ট রাজনগরের ময়নার দোকান নামক স্থানে মাছ ধরতে গিয়ে হৃদয় আহমদ (১৯) নামে এক কিশোর পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হবার খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, নিখোঁজ হৃদয় আহমদ উপজেলার মেদিনীমহল গ্রামের সোনাওর আলীর ছেলে।
এদিকে এবারের বন্যায় রাজনগরে ১০ হাজার ৭শ হেক্টর আমন ফসল লক্ষমাত্রার প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। এছাড়াও খাদ্য গোদামে মজুদকৃত ২৫ টন ধান ও চাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় দুর্গত এলাকার লোকজন পানি ও খাদ্য সংকটে পড়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য ৩০ মেঃ টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জন প্রতিনিধিহীন রাজনগরের বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলাম, বিএনপি, খেলাফত মজলিশ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ত্রান সহায়তা করে যাচ্ছেন। তবে, দুর্গত মানুষের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি, গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নদী গুলোর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় রাজনগর সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা পলাবিত হয়েছে। আশারাখি ২/১ দিণের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এছাড়াও সৃষ্ঠভাঙন সংস্কারে সব ধরণের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
এব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক মহোদয় রাজনগরের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্যারদের নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্গত মানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় কাজ করছি। তাদের খাদ্য সহায়তার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের জন্য ৩০ মেঃ টন চাল ও নগদ ৩ রাখ টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। দ্রুত তা ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।