‘চোখের জলের হয় না কোনো রঙ’। গানের এই পঙক্তি কেবল জলের রঙহীনতাকে বোঝায় না। রূপক অর্থে এই কথাগুলো হয়ে ওঠে সর্বব্যাপী। মানে সাদা কিংবা কালো, এশিয়া কিংবা আমেরিকা; সব বর্ণ ব্যবধান আর দেশকালের সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে চোখের জলই মানুষকে পারে এক কাতারে দাঁড় করাতে। চোখের জল যে বার্তা দেয় ভাষার ব্যবধান ঘুঁচিয়ে তা আলোড়ন তুলে যায় সবার মাঝে। কোপা আমেরিকার ফাইনালে তেমন এক দৃশ্যের অবতারণা করলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। তার কান্না ছড়িয়ে পড়ল দেশ থেকে দেশান্তরে। সাত মহাদেশই যেন সেই কান্নার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলো। কেবল আর্জেন্টিনা কিংবা মেসি ভক্তরাই নন, এই কান্নায় সামিল হয়েছেন সব ফুটবল প্রেমী।
চোটের কারণে কোপার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপেক্ষর ম্যাচের ৬৬ মিনিটে মেসিকে তুলে নেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। হয়ত ক্যারিয়ারের শেষ মেগা টুর্নামেন্টের ফাইনালে এভাবে চোটের কারণে খেলা না চালিয়ে যেতে পারার বেদনা গ্রাস করেছিল তাকে। তাই সাইড বেঞ্চে বসে অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক । ম্যাচের তখন ৬৩ মিনিটে এই চোট পান মেসি। কলম্বিয়ার লুইস দিয়াজের কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে পেছন পেছন ছুটছিলেন মেসি। হঠাৎ করেই তিনি মাঠে পড়ে যান। কিছুতেই উঠতে পারছিলেন না। ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।
মেসি মাঠ থেকে ওঠার সময়ই তাঁর চোখে পানি ছিল। কান্নার সেই পানি বারবার হাত দিয়ে মুছছিলেন। মাঠ থেকে ওঠার সময় পা থেকে খোলা বুটটি ছুড়ে মারেন হতাশায়। এরপর ডাগআউটে গিয়ে বসে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। সেই কান্নায় সুর লহরী পৌঁছে যায় গ্যালারিতে। দর্শকদের মনেও বেজে ওঠে সেই করুণ সুরের মূর্ছনা।
মেসির সেই কান্নার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে অনলাইন মাধ্যমেও লাগে বেদনার আঁচ। তবে মেসির সেই বেদনা অশ্রূর ক্ষণ দীর্ঘায়িত হয়নি।
অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ১১২ মিনিটের গোলে কলম্বিয়াকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে মেসির দল। এরপরও তিনি কেঁদেছেন, তবে সেই কান্না আনন্দের। তার সে কান্নায়ও সঙ্গ দিয়েছে গ্যালারি, সঙ্গ দিয়েছে সারা দুনিয়া। মেসি ভক্ত থেকে ফুটবল প্রেমীরাও সেই কান্নায় সঙ্গ না দিয়ে পারেননি। এই চোখের জল যে সুন্দর ও মায়াবী। জাদুর ঘোরে বুকের ভেতর এক সুমধুর ধুন তোলা এই কান্না। এই কান্নার দেরাজ খুললেই যে বেরিয়ে আসে রাশি রাশি হাসি!