চরম ট্রাজেডির শিকার হয়েছেন সিলেটের ওসমানীনগর এলাকার যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের পরিবার। রফিকুল ও তার দুই সন্তানের পর এবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন স্ত্রী হুসনে আরাও। বুধবার (১৯ অক্টোবর) ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে পরিবারের চার সদস্য মারা গেলেন।এ পরিবারে কেবল বেঁচে রইলেন নিহত প্রবাসী দম্পতির বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম।গত ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যান প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্য। তারা হলেন- যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তার ছোট ছেলে মাহিকুল ইসলাম (১৮), রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম (৪৫), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫) ও মেয়ে সামিয়া ইসলাম (২০)।তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও ছেলে মাহিকুল ইসলাম মারা যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অন্যদের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু ১১ দিনেও ফিরছিল না সামিরার জ্ঞান। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন,বিষক্রিয়ায় সামিরার কিডনি, লিভার কাজ করছিল না।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসায় বোর্ড গঠন করে। শেষ পর্যন্ত অচেতন অবস্থায়ই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন সামিরা
পরে ৩ আগস্ট হুসনে আরা ও সাদিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর মা-ছেলে পুনরায় তাজপুরের ভাড়া বাসায় ওঠেন। পরে হুসনে আরা আবার অসুস্থ হলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।ঘটনার দুই মাস ২৫ দিনের মাথায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুসনে আরা বেগমও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন এবং নিহত হুসনে আরার ভাই গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের ধারণা,ঘটনার রাতে দীর্ঘ সময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী ও অপর এক ছেলে সাদিকুল ইসলাম এবং একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম।জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরনের বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, তা নিশ্চিত হতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত পাঠানো হয়। এছাড়া ওই রাতে তারা যে খাবার খেয়েছিলেন, সে খাবারও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, যুক্তরাজ্য থেকে গত ১২ জুলাই তারা দেশে আসেন। গত ১৮ জুলাই সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুরে ওই ফ্লাটের দ্বিতীয় তলার একটি ইউনিটে ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। মূলত ছেলের চিকিৎসার সুবিধার্থে বাসা ভাড়া করে তারা এখানে উঠেছিলেন।স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ২৫ জুলাই রাতের খাবার শেষে প্রবাসী রফিক তার স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন, শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম ও মেয়ে সাবিলা বেগম (৮) অন্যান্য কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে বাসার সুস্থ স্বজনরা ডাকাডাকি করে প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ তার স্ত্রী-সন্তানরা ঘরের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার হুলিয়ারবন্দ এলাকায় তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ঝলক পালের মালিকানা ভবনের ওই ফ্লাট থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্যকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এসে বাসার দরজা ভেঙে তাদের অচেতন অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়।