নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করলেও সুপার টুয়েলভের দ্বিতীয় ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। তবে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া টাইগাররা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তুলে নিয়েছে ৩ রানের শাসরুদ্ধকর জয়।যে চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে নেমে শুরুটা চার দিয়ে করলেও প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। ডিপ থার্ডম্যানে দাঁড়িয়ে থাকা মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মাধেভেরে (৪)। যাতে ওই ৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় রোডেশিয়রা।এরপর দ্বিতীয় ওভারে ৭ নিলেও তৃতীয় ওভারে ফিরেই জিম্বাবুয়ে শিবিরে ফের আঘাত হানেন তাসকিন। এবার তার শিকার ক্রেইগ আরভিন। দুই চারে ৭ বলে ৮ রান করে ফেরেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। ফলে ১৭ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় দলটি। এরপর মিল্টন শুম্বা (৮) ও দুর্দান্ত সিকান্দার রাজাকে ৯০) ফিরিয়ে উইকেট শিকারে যোগ দেন মুস্তাফিজ। মিড অনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সাকিব।
৩৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে, তখনই চাকাভাকে নিয়ে ৩৪ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধের ইঙ্গিত দেন উইলিয়ামস। তবে নিজের তৃতীয় ওভারে ফিরেই চাকাভাকে সোহানের ক্যাচ বানিয়ে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। ১৯ বলে ১৫ করে আউট হন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক। যাতে ৬৯ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় তার দল।এরপর শন উইলিয়ামস এবং রায়ান বার্ল মিলে জুটি বেঁধে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে যান জয়ের কাছাকাছি। ৪৩ বলে দুজনে যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৬৩ রান। যাতে শেষ ওভারে দলটির দরকার পড়ে ১৬ রান। তবে শাসরুদ্ধকর ও চরম নাটকীয় শেষ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে নিতে পারে ১২ রান। যাতে ৩ রানের উত্তেজনাপূর্ণ জয় নিয়ে মাঠে ছাড়ে সাকিব বাহিনী।চরম উত্তেজনা পূর্ণ শেষ ওভারটি করার জন্য সাকিব বল তুলে দেন মোসাদ্দেকের হাতে। অধিনায়কের আস্থার সঠিক প্রতিদানই দেন ডানহাতি স্পিনার। তবে নাটকীয় থেকে চরম নাটকীয় ওই ওভারে স্নায়ুর চরম পরীক্ষা নেন তিনি। প্রথম বল থেকে লেগবাই সূত্রে এক রান নেয়ার পর উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় সৌম্যের হাতে ধরা পড়েন ইভান্স।
এরপর ক্রিজে এসেই লেগবাই সূত্রে চার আদায় করেন রিচার্ড এনগারাভা। ফলে ৩ বলে ১১ রান দরকার পড়ে জিম্বাবুয়ের। এ অবস্থায় ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান এনগারাভা। যাতে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে দর্শক গ্যালারী। আর ২ বলে মাত্র ৫ রান দরকার পড়ে তাদের। ম্যাচ যখন হেলে পড়েছে জিম্বাবুয়ের দিকে, ঠিক তখনই ছক্কা হাঁকাতে যাওয়া এনগারাভাকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মোসাদ্দেক ও সোহান।ফলে শেষ বলে ৫ রান ডিফেন্ড করতে হতো টাইগারদের। এ অবস্থায় শেষ বলেও নতুন ক্রিজে আসা ব্লেসিং মুজারাবানিকে ফাঁদে ফেলেন সেই স্ট্যাম্পিংয়ের। আর জয়ের আনন্দে মেতে উঠে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। তবে রিভিউয়ে স্ট্যাম্পের একটু সামনে থেকে বলটি ধরায় নো বল ডাকেন আম্পায়ার।এমনই চরম নাটকীয় ম্যাচে আবারও মাঠে প্রবেশ করেন ফিল্ডার ও ব্যাটাররা। এবার জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় এক বলে ৪ রান। তবে এবার আর কোনও ভুলচুক করেননি মোসাদ্দেক বা সোহান। শেষ বলটি মিস করেন ব্যাটার মুজারাবানি। সেইসঙ্গে ৩ রানের উত্তেজনাপূর্ণ জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন সাকিব বাহিনী। আর আবারও ম্যাচ সেরা হন তাসকিন আহমেদ।
এর আগে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে গাব্বায় আগে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার-প্লেতেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ১০ ওভারে তুলতে পারে ৬৩ রান। পরের পাঁচ ওভারে যোগ করে আরও ৪০ রান, একটি উইকেট হারিয়ে। আর শেষ পাঁচ ওভারে ৪টি উইকেট হারিয়ে নিতে পারে মাত্র ৪৭টি রান।যাতে নির্ধারিত ওভারে সাকিবের দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান। দলের পক্ষে এদিন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন শান্ত। ৫৪ বলে ৭১ রানের ইনিংসে খেলে আউট হন রাজার বলে। তার ক্যারিয়ার সেরা এই ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও একটি ছয়ের মার।এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে আফিফের ব্যাট থেকে। আর সাকিব আউট হন ২৩ রান করে।জিম্বাবুয়ের পক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করা এনগারাভা ও মুজারাবানি নেন ২টি করে উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট পান সিকান্দার রাজা ও শন উইলিয়ামস।