চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে যেহেতু তৃতীয় মেয়াদে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন শি জিনপিং। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের বিশ্বস্তরাই দলের নতুন পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটিতে স্থান পাওয়ায় এখন তার ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার সুযোগ থাকছে না।এ কারণে বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, তার ক্ষমতা এখন নিয়ন্ত্রণহীন। লেখক ফেদেরিকো গিউলিয়ানিও ইনসাইড ওভারে লিখেছেন, নতুন পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সব সদস্য শির বিশ্বস্ত।হংকং ব্যাপ্টিস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জিন-পিয়েরে ক্যাবেস্তান বলেছেন, দেশের উপর শি জিনপিংয়ের অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের সবাই তার বিশ্বস্ত। এ পদ্ধতিতে একেবারেই কোন কাউন্টারব্যালেন্স বা ভারসাম্য নেই। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সাত সদস্যের একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি ঘোষণা করেছে। এই ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ বৃত্তের সবাই শির অনুগত। প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের দায়িত্ব শেষে চীনের প্রধানমন্ত্রী হবেন সাংহাই পার্টির সেক্রেটারি লি কিয়াং এবং অর্থনীতির প্রধান নেতা। আশ্চর্যজনকভাবে লি কিয়াংয়ের জাতীয় সরকারে কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।লেখক ফেদেরিকো বলেন, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেঝিয়াং প্রদেশে ২০০০এর প্রথম দশকের দিকে সহযোগিতকামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এই সুযোগ পেয়েছেন লি কিয়াং। তাকে শির ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হচ্ছে। লিকে প্রধানমন্ত্রী করার পর ঝাও লেজিকে এ কমিটির ক্রম তালিকায় তৃতীয় স্থানে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি সম্ভবত আইনসভার নেতা হিসেবে কাজ করবেন। আগামী বছর যখন আইনসভার অধিবেশন হবে, তখন এই পদগুলো পূরণ করা হবে। কোনো সংস্কার ছাড়াই এসব নিয়োগ বিনিয়োগকারী ও জনগণকে হতাশ করেছে।কিছু বিশ্লেষক এ পরিস্থিতিকে ‘ম্যাক্সিমাম শি’ বলেছেন। এসব নিয়োগের ধারায় তা মূর্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ডিং জুয়েক্সিয়াং। দলের সিনিয়র এই নেতাকে শির ‘দ্বিতীয় সত্তা’ বা চিফ অব স্টাফ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর বেইজিং পার্টির সেক্রেটারি করা হয়েছে কাই কুইকে।
লেখক গিউলিয়ানির মতে, আইন স্কুলের সাবেক ডিন ও আইডলজি বিভাগের প্রধান ওয়াং হুনিং কমিটিতে বহাল রাখা হয়েছে। আর স্ট্যান্ডিং কমিটির তালিকায় সপ্তম স্থানে রাখা হয়েছে চীনের রপ্তানিমুখী উৎপাদনখাতের কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াংডংয়ের পার্টি সেক্রেটারি লি শিকে। সপ্তাহব্যাপী ওই জাতীয় কংগ্রেস থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও কাউকে সতর্ক না করে এক সহকর্মীর হাত ধরে বেরিয়ে যান। বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।স্ট্যান্ডিং কমিটি নির্বাচনের পর প্রথমবার যখন তারা সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন, তখন দেখা যায় এ কমিটিতে কোনো নারী সদস্য নেই। সংস্কারের প্রবক্তা ও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ইয়াং স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। লেখকের মতে, ওয়াং এখনও ৬৭ বছর বয়সে কাজ করছেন।
এর আগে জিওপলিটিকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি শি জিনপিংয়ের অনুগতদের নিয়ে গঠিত, যারা এখন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছেন। চীনের রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিত্বকারী সাত সদস্যের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে এবার নতুন সদস্য হয়েছেন লি কিয়াং, কাই কুই, ডিং জুয়েক্সিয়াং ও লি শি। পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে নতুন সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়। যাদের সবাই ‘শি আর্মি’র প্রতিনিধি।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর বেশিরভাগ সদস্যও শি জিনপিংয়ের অনুগত। জিওপলিটিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্লেষকদের ভাষ্য, পার্টির নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে এবং পরিকল্পিত অর্থনীতিতে ফিরে আসার জন্য শি জিনপিং চীনের পূর্ববর্তী নেতা মাও সেতুং যুগের নীতি অনুসরণ করছেন।বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, ১৯তম জাতীয় কংগ্রেসের পরে শি তার গতিপথ পরিবর্তন করেছিলেন এবং দল থেকে তার জন্য অনাকাঙ্খিত কর্মকর্তাদের অপসারণের জন্য নতুন আইন প্রয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া উচ্চ-প্রযুক্তির উদ্যোক্তা, ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা, ভার্চুয়াল জগতের জনপ্রিয় শিল্পী, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং নিউক্লিক অ্যাসিড লকডাউনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেছিলেন শি। সূত্র: এএনআই