সিলেটের কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী মিকিরপাড়া এলাকায় আবারো ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ৪ ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে মিকিরপাড়া সীমান্ত এলাকায় টহল দেয়ার সময় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বাংলাদেশ সীমান্তের ১৩৩২ নম্বর পীলারের কাছ থেকে তাদের আটক করা হয়।
জানা যায়, উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মিকিরপাড়া গ্রামের কালা মিয়ার পুত্র স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম উদ্দিন ওরফে গিরিঙ্গীবাজ সেলিমের বসত বাড়িতে গত সোমবার রাতে ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য ফরিদপুর জেলার ৪ ব্যক্তি অবস্থান করেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে ডোনা বিজিবি ক্যাম্পের জওয়ানরা মিকিরপাড়া সীমান্ত এলাকায় টহল দেয়ার সময় ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরকোচিয়া গ্রামের মান্নান মোল্লার পুত্র আজগর মোল্লা, শেখ আক্তারের পুত্র মিজানুর রহমান, তার ভাই বজলার শেখ, আব্দুর রহমানের পুত্র শাখাওয়াত কবিরকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বাংলাদেশ সীমান্তের ১৩৩২নং পীলারের কাছ থেকে তাদের আটক করে।
পরে আটককৃতদের বিজিবি সদস্যরা ডোনা বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার পর কানাইঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
থানা হেফাজতে থাকা আটককৃতরা জানান, তারা কানাইঘাট সীমান্তের মিকিরপাড়া গ্রামের শাহিন আহমদ নামে এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে ভারতে যাওয়ার জন্য ২৪ হাজার টাকা দিয়েছেন। সোমবার রাতে তার বাড়িতে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, শাহিন আহমদ মিকিরপাড়া গ্রামের কালা মিয়ার পুত্র। তার ভাই সেলিম উদ্দিন ওরফে গিরিঙ্গীবাজ সেলিম লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাদের বাড়িতে থেকে তাদের মাধ্যমে মঙ্গলবার ঐ ৪ ব্যক্তি ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন।
ডোনা বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিলদার শাহজাহান জানান, মিকিরপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় ফরিদপুর জেলার ৪ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। বিজিবি বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগ এনে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, দনা বিজিবি ফরিদপুর জেলার ৪ ব্যক্তিকে থানায় সোপর্দ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিজিবি বাদী হয়ে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করছে।
তবে আটক ব্যক্তিরা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন তারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ফেরী ফেরী করে পাপোশ বিক্রি করতেন। কানাইঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার জন্য তারা শাহিনের সাথে যোগাযোগ করে এসেছিলেন।
প্রসজ্ঞত যে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হওয়ার পর বিশেষ করে কানাইঘাটের ডোনা ও মিকিরপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের অনেক কর্মকর্তা একটি সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত ই আগস্ট দনা সীমান্ত এলাকায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মালিক চৌধুরীকে আটক করে দনা বিজিবি ক্যাম্পের জওয়ানরা।
এছাড়াও মিকিরপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ভারতের অভ্যন্তরে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইছহাক আলী খান পান্নার লাশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ উদ্ধার করে। তাছাড়া সম্প্রতি একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সময় গোপালগঞ্জ জেলার দুই যুবককে এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার আরো এক ব্যবসায়ীকে আটক করে বিজিবি।