মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীতে ভাঙ্গনে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এ পানিতে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক কাঁচা ও আধা কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নামলে ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই এখনও বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। বন্যাকবলিত লোকদের মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর্থিক সংকটের কারনে ধ্বসে পড়া ঘর মেরামত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন।
জানা যায়, এ বন্যায় ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙ্গনে প্লাবিত হয় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিস্তির্ণ এলাকার নিমজ্জিত হয় প্রায় ১৪৫টি গ্রাম। পানিবন্দি হয় ৪১ হাজার ৬শ’ ৬১টি পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে তলিয়ে যায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর আমনক্ষেত ও আউশ ফসল। ২ হাজার পুকুর, ফিশারি ও জলাশয়ের সব মাছ পানিতে ভেসে যায়। পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায় আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট। এলজিইডি আওতাধীন ৮০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় শতাধিক কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে উঠেছে এই ক্ষতের চিত্র।
সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়নের ৫৫টি পরিবারের টিনশেডের মাটির কাঁচা বসতঘর বানের স্রোতে লন্ডভন্ড হয়েছে। আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও এলাকার আনোয়ার মিয়া, তাজ মিয়া, সুন্দর মিয়া, সাবিহা বেগম, আজাদ মিয়া, নাজমা বেগম, রজব আলীসহ কমপক্ষে ২০টি বসতঘর ভেঙে পড়েছে। চাম্পারায় চা বাগানের গহুর বুনার্জী, অছয় সূর্যবংশী, অনিরুদ্ধ তংলা, দেওয়ান মুন্ডা, সুমেশ রায়, উত্তম রাজভর, গুপেশ গড়, সুবাস কর্মকার, রাজু গড়, ইছামতির দুলাল কর্মকার সহ কমপক্ষে ২৫টি বসতঘর ভেঙে পড়েছে।
কুরঞ্জি এলাকায় গকুল রজক ও নকুল রজকসহ কমপক্ষে ১০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যায় শমসেরনগর, আলীনগর, পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আউশ ফসল, আমন ক্ষেত, শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাবিহা বেগম বলেন, মাথা গোঁজার শেষ সম্বল বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। এখন কোথায় যাবো? যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ঘর ঠিক করবো কী করে? নাজমা বেগম বলেন, এমনিতেই তিন বেলা খেতে পারিনা, এর মধ্যে বন্যায় ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। এখন পেটে ভাত দিবো না ঘর মেরামত করবো? এই চিন্তায় আছি। কেউ যদি সাহায্য করতো, তাহলে কোন রকম জান বাঁচাতে পারতাম।
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন ও ইসলামপুর ইউ চেয়ারম্যান সুলেমান মিয়া জানান, বন্যায় বেশকিছু ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। বসতঘরের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় গৃহহীন হয়েছেন অনেক পরিবার। বসতঘর হারানো এসব মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা তৈরি করে দ্রুত পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা হবে।