সিলেটের গোয়াইনঘাটে একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত আব্দুল মন্নানের (২৫) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহতের মা ও আত্মীয় স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়েছে পুরো খলাগ্রাম।
আব্দুল মন্নানের মা আফিয়া বেগম বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। রবিবার (৭ জুলাই) নিহতের বাড়িতে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
আফিয়া বেগম সিলেটভিউ-কে বলেন আমার ৩টি মেয়ে ও একমাত্র ছেলে আব্দুল মন্নান। ৩ মেয়ের মধ্যে ১ জনের বিয়ে হয়েছে। বাকি আছে আরো দুজন। আব্দুল মান্নান বিবাহিত। তার দুটি সন্তান। আমার স্বামী নানা রোগে ভোগছেন। তাই বারকি শ্রমিকের কাজ করে আব্দুল মান্নান পরিবার চালাতেন।
আফিয়া কেঁদে কেঁদে বলেন- আমার একমাত্র ফুয়ারে তারা মারিলিছে, এখন আমি কিতা লইয়া বাঁচতাম। তিনি তার ছেলের খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পড়েছেন মন্নানের পিতা কুদরত উল্লাহ। তিনিসহ মান্নানের পরিবারের সবাই খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন।
এর আগে শনিবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের খলাগ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে গ্রামের সায়েদ আহমদের একটি ছাগল লতিফ মিয়ার বাড়িতে যায়। এসময় লতিফ মিয়ার ছেলে আলিম উদ্দিন ছাগলটি ধরে পানিতে ফেলে দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় উপস্থিত লোকজন পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং স্থানীয় মুরুব্বিরা উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিশে বসার অনুরোধ করলেও লতিফ তা মানেননি। পরদিন শনিবার সকালে গ্রামের মুরুব্বি ইজ্জত উল্লাহ ও ফখরুল ইসলাম পুনরায় লতিফের বাড়িতে যান বিচার-সালিশের জন্য এবং ইজ্জত উল্লাহ তার পকেট থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা আমানতের জন্য লতিফ মিয়াকে প্রদান করেন। এসময় লতিফ মিয়ার লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে থেকে বের হয়ে সায়েদ পক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালালে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে উভয় পক্ষের ৮জন আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মান্নান, খালিক ও লতিফকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে বেলা ২টার দিকে মান্নান হাসপাতালে মারা যান।
ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে রবিবার (৭জুলাই) বাদ মাগরিব স্থানীয় পাঁচসেউতি হাফিজিয়া মাদরাসা মাঠে মরহুমের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান সিলেটভিউ-কে বলেন- নিহতের ঘটনায় রবিবার রাত পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে ঘটনার পরপরই ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। রবিবার তাদের আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।