ক্রমবর্ধমান সিলেট নগরীতে পানির চাহিদাও বাড়ছে সমানতালে। কিন্তু চাহিদার সমপরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন (সিসিক)। নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা হচ্ছে সাড়ে ৪ কোটি লিটারের মতো। ফলে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট লেগেই আছে সিলেট নগরীতে। এ রকম অবস্থায় সিলেটের সারি নদীর প্রবাহ চেঙ্গেরখালে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিসিক। কিন্তু ৮ বছরেও সিলেটের সারি নদীতে ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পের কোন অগ্রগতি হয়নি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) ৫ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় ২০১৪ সালে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৮০৮ কোটি টাকা।
সিসিক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ২৭টি ওয়ার্ডের জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এই প্ল্যান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে সিসিকের ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪২টি। পানির চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু, পানির উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। অনেকটা বাধ্য হয়ে গভীর উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করে সাময়িকভাবে এই সমস্যাকে সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, ভূমিকম্পের রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত সিলেট নগরীতে অধিক সংখ্যক উৎপাদক নলকূপ স্থাপন বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট নগরীর পানির স্তরও ক্রমশও নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই, ভূ-গর্ভস্থ পানিকে কাজে লাগিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা।সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০১৪ সাল থেকে ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে সিলেট শহরতলীর বড়শালায় ১৩ একর জায়গা অধিগ্রহণসহ প্ল্যান্ট নির্মাণে ডিপিপি (ডেভেলপম্যান্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। গুরুত্ব বিবেচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি এই প্রকল্পের জন্য ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে ডিও (ডেমি অফিস-আধা সরকারি) লেটার দেন। কিন্তু, প্রক্রিয়া গ্রহণের ৮ বছরেও এই প্রকল্পের কোন অগ্রগতি হয়নি বলে জানান তিনি।
সম্প্রসারিত মহানগরবাসীর চাহিদার কথা বিবেচনা করে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রস্তাবিত ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র আরিফ। এ প্রসঙ্গে মেয়র বড়শালা ছাড়াও দক্ষিণ সুরমায় আরেকটি ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান।সিসিকের পানি শাখা সূত্র জানায়, নগরীতে প্রতিদিন সাড়ে ৪ থেকে ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে সিসিক।নগরীতে বৈধ গ্রাহকদের পানির চাহিদা ৪ কোটি লিটার। চাহিদার চেয়ে বেশি পানি সরবরাহ করেও সিসিক কূলকিনারা পাচ্ছে না।পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা নিরসনে এ বছরের ২ মার্চ সিলেটে সিলেট ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর এখনো বিভিন্ন স্থানে তাদের উদ্যোগে লাইন স্থাপনের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।জানা যায়, সিলেট নগরবাসীর চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রয়োজন ৮ কোটি লিটার। বর্তমানে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৪-৫ কোটি লিটার । বর্তমানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পানি পরিশোধন ও সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে পানি সরবরাহের পরিমাণ আরও বাড়বে।