সততা ও নৈতিকতায় বলীয়ান মাওলানা সৈয়দ আবদুন নূর (রাহ.) অন্যায়ের বিরুদ্ধে বরাবর আপোষহীন ছিলেন। সত্যের পথে সংগ্রামী এই সাধক ইসলামী শিক্ষা ও তাহযীব-তামাদ্দুনের বিকাশে আজীবন সাধনা করেছেন। তার চেহারায় এক ধরনের সারল্যের সৌন্দর্য ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে সহজ মনের হৃদয়বান মানুষ হলেও অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ়চেতা স্বভাবের ছিলেন। আর ছিলেন ঐতিহ্যের অফুরন্ত ভান্ডার- যেটি আমাদের নিজস্ব সম্পদ ও সংস্কৃতি হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। এভাবে প্রজন্মের জন্য তিনি রেখে গেছেন তাঁর পদচিহ্ন।
গত ১২মে, রোববার বিকেলে লন্ডনের সেভেন কিং হাই রোডে মাদ্রাসাতুন নূর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও দোওয়া মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানে বিলেতের শীর্ষস্থানীয় উলামা ও বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মরহুমের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে প্রাণখোলা বক্তব্য রাখেন। একজন সফল অভিভাবক হিসেবে তাঁর সকল সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ইসলামী জ্ঞানার্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা বলেন, মাওলানা সৈয়দ আবদুন নূর (রাহ.) সৈয়দপুর আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘকাল সমাজ বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা হিসেবেও জাতীয় রাজনীতিতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মরহুমের দ্বিতীয় সন্তান মাদ্রাসাতুন নূর লন্ডনের পরিচালক মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ। তিনি পিতার লিখিত জীবনী উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অপর দুই সন্তান মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ ও মাওলানা মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ। সভায় শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মরহুমের দৌহিত্র সৈয়দ কাসিম ও সৈয়দ আব্দুল্লাহ। ‘মাওলানা সৈয়দ আবদুন নূর (রাহ.) এক অবিস্মরণীয় নাম’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধের সারাংশ তুলে ধরেন সময় সম্পাদক কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি ও কলামিস্ট অধ্যাপক ফরিদ আহমদ রেজা, ইউকে জমিয়তের সভাপতি মাওলানা শুয়াইব আহমদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা মুফতি আবদুল মুনতাকিম, খেলাফত মজলিস ইউকের সভাপতি মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাজাহিরুল উলূম লন্ডনের প্রিন্সিপাল শায়খ ইমদাদুর রহমান আল মাদানী, মদীনাতুল খাইরির চেয়ারম্যান মাওলানা শায়খ ফয়েজ আহমদ, জামেয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথের সহকারী পরিচালক হাফিজ হুসাইন আহমদ, আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবীগন্জী (রাহঃ)-এর জামাতা বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মুজাহীদ উদ্দিন, কাউন্সিলার সৈয়দ শায়খুল ইসলাম, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মুজিবুর রহমান, তাসনিম জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আশফাকুর রহমান, মাদ্রাসাতুন নূর লন্ডনের ডাইরেক্টর জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, মাদ্রাসার উস্তাদ হাফীজ মিফতাহুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা আরো বলেন, জীবনে প্রায় সকল ক্ষেত্রে মরহুম মাওলানার বিশেষত্ব ছিল। নামাজের পাবন্দী এবং সুন্নাতের অনুশীলনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের তারবিয়াহ ও শিক্ষার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রজন্মকে আলেম ও হাফেজ হিসেবে দ্বীনি শিক্ষায় আলোকিত করে অনুসরণীয় রোলমডেল হয়েছেন। তিনি ‘খাতিমা বিল খাইর’ তথা শুভ মৃত্যুর মাধ্যমে পরকালের যাত্রা করেছেন। পবিত্র রমজান মাসে ফজরের সময় মৃত্যুবরণ, মৃত্যুর পূর্বে শাহাদাহ-কালেমা পাঠ ও মোনাজাত শুভ মৃত্যুর লক্ষণ হিসেবেই পরিগণিত হয়েছে।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসাতুন নুর লন্ডনের ট্রাষ্টি আবু তাহের চৌধুরী, লাইফ মেম্বার আলহাজ্ব মোহাম্মদ নেসাওয়ার মিয়া, আলহাজ্ব সিকন্দর আলী, আলহাজ্ব সৈয়দ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল জলীল, আলহাজ্ব লায়েক মিয়া, আলহাজ্ব জামাল মিয়া, মাওলানা কামাল উদ্দিন, হাফীজ মাওলানা ফাহীম উদ্দিন, হাফীজ কবীর আহমদ, জমিয়ত নেতা মাওলানা হেলাল ছাতকী, ইউকে জমিয়ত নেতা হাফীজ জিয়াউদ্দিন, মাওলানা শামসুল ইসলাম, সৈয়দপুর যুব কল্যাণ পরিষদের সহ-সভাপতি সৈয়দ সোয়াইব আহমেদ, শাহেদ খান সহ আরো অনেক। পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে হৃদয় নিংড়ানো মোনাজাত করেন বরেণ্য আলেম মুফতি আবদুল মুনতাকিম।